আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার উপকারিতা
আমিষ জাতীয় খাবার হল এমন ধরনের খাবার, যেগুলোতে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন থাকে এবং যা
সাধারণত প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত। এসব খাবার শরীরের পেশি গঠন, কোষ মেরামত, এবং
বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। প্রোটিন ছাড়াও এসব খাবারে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন, মিনারেল এবং
স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও থাকে।
সূচিপত্রঃ আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার উপকারিতা
আমিষ জাতীয় খাবার এর কিছু উদাহরণঃ
উদাহরণ হিসেবে কিছু আমিষ জাতীয় খাবারঃ
- মাংস: গরু, মুরগি, খাসি, হাঁসের মাংস।
- মাছ: ইলিশ, রুই, টুনা, স্যামন।
- ডিম: মুরগি, হাঁস, কোয়েলের ডিম।
- দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার: গরুর দুধ, দই, পনির, মাখন।
- সামুদ্রিক খাবার: চিংড়ি, কাঁকড়া, ঝিনুক।
- বাদাম ও বীজ: বাদাম, কাজু বাদাম, চিয়া বীজ।
উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রোটিনঃ
যদিও আমিষ সাধারণত প্রাণীজ উৎসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, কিছু উদ্ভিজ্জ খাবারেও
প্রোটিন থাকে, যেমনঃ
- ডাল: মসুর, মুগ, ছোলা।
- শস্য: সয়াবিন, কিডনি বিন, মটরশুটি।
এই খাবারগুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং সুস্থ জীবনযাপনে
সহায়তা করে।
আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার উপকারিতা
আমিষ জাতীয় খাবার, যাকে আমরা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বলি, আমাদের শরীরের জন্য অনেক
উপকারী। নিচে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা দেওয়া হলোঃ
- শরীরের কোষ গঠন এবং মেরামত: প্রোটিন আমাদের দেহের কোষের প্রধান উপাদান। এটি নতুন কোষ তৈরি এবং পুরোনো কোষ মেরামতে সহায়তা করে।
- পেশি গঠনে সহায়তা: প্রোটিন পেশি গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা শরীরচর্চা করেন, তাদের জন্য প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- এনার্জি সরবরাহ: প্রোটিন আমাদের শরীরে এনার্জি হিসেবে কাজ করতে পারে, বিশেষ করে যখন কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের অভাব হয়।
- অ্যান্টিবডি উৎপাদন: প্রোটিন শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- হরমোন এবং এনজাইম উৎপাদন: প্রোটিন বিভিন্ন হরমোন এবং এনজাইম তৈরিতে সাহায্য করে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: প্রোটিন খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে, ফলে কম খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- হাড়ের সুস্থতা: প্রোটিন হাড়ের গঠনে সহায়তা করে এবং হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ লটকন ফল খাওয়ার ৭ টি উপকারিতা
যেমন মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, বাদাম, শিম, মটরশুটি, দই ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ এবং শক্তিশালী থাকে।
আমিষ জাতীয় খাবার
আমিষ জাতীয় খাবার বলতে আমরা সাধারণত সেই সব খাবারকে বুঝি যা প্রোটিনে
সমৃদ্ধ। নিচে কিছু সাধারণ আমিষ জাতীয় খাবারের উদাহরণ দেওয়া হলোঃ
১. মাংস
- গরুর মাংস
- মুরগির মাংস
- খাসির মাংস
- হাঁসের মাংস
২. মাছ
- ইলিশ
- রুই
- কাতলা
- পাঙাশ
- টুনা
- স্যামন
৩. ডিম
- মুরগির ডিম
- বাটাম ডিম
- হাঁসের ডিম
৪. দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার
- গরুর দুধ
- দই
- পনির
- মাখন
৫. ডাল এবং শস্য
- মসুর ডাল
- মুগ ডাল
- ছোলা
- কিডনি বিন
৬. বাদাম ও বীজ
- বাদাম
- কাজু বাদাম
- চিয়া বীজ
- ফ্লাক্স সিড
৭. অন্যান্য
- চিংড়ি
- কাঁকড়া
- ঝিনুক
- অষ্টকেট
এই খাবারগুলোতে প্রচুর প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে
সাহায্য করে।
দেহের জন্য আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার উপকারিতা
আমিষ জাতীয় খাবার দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো দেহের
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে। নিচে আমিষ জাতীয় খাবার
খাওয়ার কয়েকটি প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
১. কোষ গঠন ও মেরামত
আমিষ জাতীয় খাবারে থাকা প্রোটিন দেহের কোষ গঠনে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামতে
সহায়তা করে। এটি শরীরের টিস্যু, পেশি, ত্বক এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলির সুস্থতা বজায়
রাখতে সাহায্য করে।
২. পেশি গঠনে সহায়তা
প্রোটিন পেশির গঠনে এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন
বা ভার উত্তোলন করেন, তাদের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেশি গঠনের
পাশাপাশি পেশির ক্ষয় রোধ করে।
৩. এনার্জি সরবরাহ
আমিষ জাতীয় খাবার শরীরে শক্তি সরবরাহ করে, বিশেষত যখন কার্বোহাইড্রেট ও চর্বির
অভাব থাকে। প্রোটিন ধীরে ধীরে এনার্জি রিলিজ করে, যা শরীরকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে
সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
প্রোটিন থেকে তৈরি অ্যান্টিবডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এটি বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
৫. হরমোন এবং এনজাইম উৎপাদন
প্রোটিন দেহে হরমোন এবং এনজাইম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বিভিন্ন
শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা
কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া, প্রোটিন খেলে বিপাকীয় হার বেড়ে যায়, যা
ক্যালোরি খরচে সাহায্য করে।
৭. হাড়ের সুস্থতা
প্রোটিন হাড়ের গঠনে সহায়তা করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, যা বয়স্কদের
জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এটি হাড়কে মজবুত করে এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
আমিষ জাতীয় খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় থাকে।
আমিষ জাতীয় খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় থাকে।
ত্বকের জন্য আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার উপকারিতা
আমিষ জাতীয় খাবার ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো
ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নিচে ত্বকের জন্য আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার কয়েকটি প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
১. কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা
আমিষ জাতীয় খাবারে প্রোটিন থাকে, যা শরীরে কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। কোলাজেন
হল একটি প্রোটিন, যা ত্বককে টানটান ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে। এটি ত্বকের
স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং বলিরেখা ও ফাইন লাইন প্রতিরোধ করে।
২. ত্বকের মেরামত ও পুনর্গঠন
ত্বকের কোষের ক্ষতি মেরামত এবং নতুন কোষ গঠনে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমিষ
জাতীয় খাবারে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ত্বকের কোষগুলিকে মেরামত করে এবং ত্বকের
পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
৩. উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের রক্তপ্রবাহ উন্নত করে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ
দেখাতে সাহায্য করে। এছাড়া, প্রোটিন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, যা ত্বককে মসৃণ ও
নরম রাখে।
৪. ব্রণ প্রতিরোধ
আমিষ জাতীয় খাবারে থাকা প্রোটিন ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত তেল উৎপাদন রোধ করে, যা ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। তাছাড়া, প্রোটিন ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ব্রণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আমিষ জাতীয় খাবারে থাকা প্রোটিন ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত তেল উৎপাদন রোধ করে, যা ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। তাছাড়া, প্রোটিন ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ব্রণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫. টিস্যু মেরামত ও সুরক্ষা
আমিষ জাতীয় খাবার ত্বকের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। তাছাড়া, এটি ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা ত্বককে বাইরের ক্ষতিকর উপাদান থেকে সুরক্ষা দেয়।
৬. বয়সের ছাপ কমানো
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের টানটানভাব বজায় রাখে এবং বয়সের ছাপ যেমন বলিরেখা ও ফাইন লাইন কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত প্রোটিন গ্রহণ ত্বককে দীর্ঘদিন যুবক রাখে।
৭. আর্দ্রতা বজায় রাখা
প্রোটিন ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখে, যা ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
৮. ত্বকের রোগ প্রতিরোধ
আমিষ জাতীয় খাবারে থাকা প্রোটিন ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
এইসব কারণেই, আমিষ জাতীয় খাবার নিয়মিত খেলে ত্বক সুস্থ, উজ্জ্বল এবং সুন্দর থাকে।
আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
যদিও আমিষ জাতীয় খাবার দেহের জন্য অনেক উপকারী, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে আমিষ জাতীয়
খাবার খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। নিচে কিছু সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব তুলে
ধরা হলোঃ
১. কিডনির ওপর চাপ
- অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, কারণ কিডনি প্রোটিন বিপাকের ফলে সৃষ্ট বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজ করে। দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
২. হাড়ের সমস্যা
- বেশি আমিষ জাতীয় খাবার খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ক্ষয় হতে পারে, যা হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে গবেষকরা এখনও একমত নন, এবং এর ওপর আরও গবেষণা প্রয়োজন।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি
- বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ প্রাণিজ আমিষ (যেমন লাল মাংস) বেশি খেলে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত খাবারও ধমনীতে জমে হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
৪. পাচনতন্ত্রের সমস্যা
- আমিষ জাতীয় খাবারে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বল এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই কারণে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ওজন বৃদ্ধি
- যদিও প্রোটিন তৃপ্তি দেয় এবং ক্ষুধা কমায়, তবে অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়, যা ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. পানি শূন্যতা
- প্রোটিন বিপাকের সময় শরীরের বেশি পানি ব্যবহার হয়। ফলে বেশি প্রোটিন গ্রহণের ফলে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এটি ত্বক, কিডনি, এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৭. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল অসুস্থতা
- অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা যেমন ফোলাভাব, গ্যাস এবং হজমের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত যদি খাদ্যতালিকায় ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে।
৮. নিউরোটক্সিন উৎপাদন
- অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে শরীরে কিছু বিষাক্ত উপাদান (যেমন অ্যামোনিয়া) জমতে পারে, যা নিউরোটক্সিক প্রভাব ফেলতে পারে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৯. গাউটের ঝুঁকি
- বেশি পরিমাণে লাল মাংস বা অন্যান্য উচ্চ-পুরিন সমৃদ্ধ আমিষ জাতীয় খাবার খেলে গাউটের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গাউট হলো একধরনের বাত রোগ, যেখানে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমে গিয়ে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
সুতরাং, আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত সুষমভাবে এবং পরিমিত পরিমাণে। বিভিন্ন ধরনের
খাবার অন্তর্ভুক্ত করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা সুস্থতার জন্য
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনন্দিন কী পরিমান আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার
দৈনন্দিন জীবনে একজন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষের পরিমাণ ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ,
ওজন, দৈহিক কার্যকলাপের মাত্রা, এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে।
সাধারণত, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক মোট ক্যালোরির ১০-৩৫% প্রোটিন
থেকে আসা উচিত।
সাধারণ নির্দেশিকাঃ
-
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীঃ
- প্রোটিনের দৈনিক প্রয়োজনীয়তা সাধারণত প্রতি কেজি দেহ ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
- উদাহরণস্বরূপ, একজন ৭০ কেজি ওজনের ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫৬ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন।
-
শিশু ও কিশোর-কিশোরীঃ
- শিশু এবং কিশোরদের প্রোটিনের প্রয়োজন তাদের বৃদ্ধির হার এবং দৈহিক কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত তাদের দৈনন্দিন খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ একটু বেশি থাকতে হয়।
-
গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী নারীঃ
- গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারীদের প্রোটিনের চাহিদা বেশি। তাদের ক্ষেত্রে প্রোটিনের চাহিদা প্রতিদিন ৭১ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
-
খেলোয়াড় এবং উচ্চ শারীরিক পরিশ্রমকারী ব্যক্তিরাঃ
- যারা নিয়মিত ভার উত্তোলন বা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের প্রোটিনের চাহিদা সাধারণত বেশি হয়। তাদের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.২-২.০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হতে পারে।
উদাহরণ হিসেবেঃ
- ১টি বড় ডিম: প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন
- ১০০ গ্রাম মুরগির মাংস: প্রায় ২৫-৩০ গ্রাম প্রোটিন
- ১ কাপ রান্না করা ডাল: প্রায় ১৫-১৮ গ্রাম প্রোটিন
- ১০০ গ্রাম সয়াবিন: প্রায় ৩৬ গ্রাম প্রোটিন
- ১ কাপ দই: প্রায় ১০ গ্রাম প্রোটিন
সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাঃ
সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অন্যান্য পুষ্টি
উপাদানের ভারসাম্যও বজায় রাখতে হবে। খাদ্যতালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি, ফল,
শস্যদানা, এবং ফাইবার থাকা উচিত। অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবার খেলে বিভিন্ন
স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন কিডনির সমস্যা বা হৃদরোগের ঝুঁকি।
আপনার নির্দিষ্ট প্রোটিন চাহিদা নির্ধারণের জন্য একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ
করা উত্তম।
কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url