জানুন আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

"আলু" হলো একটি বহুল ব্যবহৃত খাদ্য উপাদান যা মূলত একটি সবজি। এটি বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।

সাধারণত আলুকে ভাজা, ভর্তা, সেদ্ধ, বা বিভিন্ন ক্যারির সাথে রান্না করা হয়। এছাড়াও, আলু দিয়ে চিপস এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাইও তৈরি করা হয়, যা শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।

সূচিপত্রঃ জানুন আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আলু কি ?

আলু একটি জনপ্রিয় সবজি, যা সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে খাওয়া হয়। এটি একটি কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ যা মাটির নিচে জন্মায় এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Solanum tuberosum। আলু সাদা, লাল, বাদামী বা বেগুনি রঙের হতে পারে এবং এর বিভিন্ন আকার ও আকৃতি আছে।

আলু ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, পটাসিয়াম, ফাইবার, এবং কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস। এটি ভাজা, সিদ্ধ, বেক করা, বা রান্না করে খাওয়া যায় এবং বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয়, যেমন ভর্তা, ভাজা, তরকারি, স্যালাড ইত্যাদি।

আলু খেলে কি মোটা হয়

আলু খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা থাকতে পারে, তবে তা নির্ভর করে আপনি কীভাবে এবং কতটা আলু খাচ্ছেন তার ওপর। আলুতে কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি রয়েছে, যা শরীরের জন্য শক্তির একটি প্রধান উৎস। তবে মোটা হওয়ার মূল কারণ হল অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ, যা শরীর খরচ করতে পারে না এবং তা চর্বি হিসেবে জমা হয়।
কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত:
  1. পাকানোর পদ্ধতি: যদি আলু ভাজা হয়, যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা চিপস, তাহলে এতে প্রচুর পরিমাণে তেল ও ক্যালোরি যোগ হয়, যা মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, সিদ্ধ বা বেক করা আলু তুলনামূলকভাবে কম ক্যালোরিযুক্ত হয়।

  2. পরিমাণ: যে কোনো খাবারের মতোই, অতিরিক্ত পরিমাণে আলু খেলে ক্যালোরি বেশি হয়ে যেতে পারে, যা ওজন বাড়াতে পারে।

  3. সংযোজিত উপাদান: মাখন, ক্রিম, বা চিজ যুক্ত আলুর খাবারে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

  4. সুষম খাদ্যাভ্যাস: আলু খাওয়া হলে তা অবশ্যই সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে খেতে হবে। শুধুমাত্র আলু খাওয়ার পরিবর্তে প্রোটিন, সবজি, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির সঙ্গে খেলে পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকে।

আরো পড়ুন: রসুন খাওয়ার উপকারিতা

সুতরাং, পরিমিত পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে আলু খেলে মোটা হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

আলু খাওয়ার  উপকারিতা

আলু খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এটি শুধু সুস্বাদু নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেকভাবে উপকারী। নিচে আলু খাওয়ার কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

১. শক্তির উৎস:
  • আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরের জন্য প্রাথমিক শক্তির উৎস। এটি দ্রুত শক্তি প্রদান করতে সহায়ক এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
২. ভিটামিন সি-এর উৎস:
  • আলু ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

৩. পটাসিয়াম সমৃদ্ধ:

  • আলুতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পটাসিয়াম ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক।
৪. ফাইবারের উৎস:
  • আলুতে খাদ্য ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। ফাইবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়ক।
৫. বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ:
  • বিশেষ করে মিষ্টি আলুতে (sweet potato) বিটা-ক্যারোটিন থাকে, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। এটি চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক।
৬. আলুতে কম ক্যালোরি:
  • আলুতে চর্বি কম থাকে এবং সঠিকভাবে রান্না করলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। সিদ্ধ বা বেক করা আলু স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য বিকল্প হতে পারে।
৭. ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের উৎস:
  • আলুতে ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন থাকে, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
৮. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ:
  • সঠিকভাবে রান্না করা আলু গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে তুলনামূলকভাবে কম, যা রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৯. প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
  • আলুতে ফাইটোকেমিক্যাল এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
১০. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি:
  • আলুর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি৬ নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদন বাড়ায়, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

উপসংহার

আলু একটি পুষ্টিকর খাদ্য, যা সঠিক পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে খাওয়া উচিত। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

আলু খেয়ে ওজন কমাবেন যেভাবে

আলু খেয়ে ওজন কমানোর জন্য কিছু পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো। আলুতে প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকলেও সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণে খেলে এটি ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে।

১. পুষ্টিগুণ এবং ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ:
  • আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য উপকারী।
  • একেকটি মাঝারি আকারের আলুতে প্রায় ১১০ ক্যালোরি থাকে, যা একটি স্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ন্ত্রণ ডায়েটের জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
  • আলু সেদ্ধ করে খেলে অতিরিক্ত তেল এবং মসলার ব্যবহার এড়ানো যায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২. সেদ্ধ আলু খাওয়া:
  • সেদ্ধ আলু খাওয়ার ফলে এর মধ্যে থাকা ফাইবার ভালোভাবে পাওয়া যায়, যা পেট ভরাট রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
  • সেদ্ধ আলু খাওয়ার পর সামান্য লবণ, গোলমরিচ বা লেবুর রস যোগ করা যেতে পারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য, তবে তেল, মাখন বা ক্রীম পরিহার করা উচিত।
৩. আলুর ভর্তা (তেল ছাড়া):
  • আলুর ভর্তা তৈরির সময় সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকরভাবে তৈরী করা যায়।
  • তেল ও মসলার পরিমাণ কমিয়ে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ এবং ধনেপাতা কুচি দিয়ে ভর্তা তৈরি করতে পারেন। এটি স্বাদ বাড়াবে এবং ক্যালোরি কম থাকবে।
৪. গ্রিল বা বেকড আলু:
  • আলু বেক করে বা গ্রিল করে খেতে পারেন। এটি অতিরিক্ত তেল ছাড়াই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর হয়।
  • উপরে সামান্য হালকা তেল স্প্রে করতে পারেন এবং লবণ ও গোলমরিচ ছিটিয়ে গ্রিল করা যেতে পারে।
৫. আলুর স্যালাড:
  • সেদ্ধ আলুর সাথে অন্যান্য সবজি (যেমন টমেটো, শসা, ক্যাপসিকাম) এবং একটুখানি অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর স্যালাড তৈরি করতে পারেন।
  • এতে ক্যালোরি কম থাকবে এবং প্রোটিন, ফাইবার, এবং অন্যান্য ভিটামিন পাওয়া যাবে।
৬. আলুর স্যুপ:
  • সেদ্ধ আলু, গাজর, সেলারি, এবং অন্যান্য সবজির সাথে স্যুপ তৈরি করতে পারেন।
  • স্যুপে অতিরিক্ত মাখন বা ক্রীম এড়িয়ে চলুন।
৭. আলুর চিপসের পরিবর্তে বেকড আলু:
  • ডিপ ফ্রাইড আলুর চিপস খাওয়ার পরিবর্তে বেকড আলু খেতে পারেন, যা কম তেলযুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর হয়।
৮. ভাত বা রুটির পরিবর্তে আলু:
  • মাঝে মাঝে ভাত বা রুটির পরিবর্তে সেদ্ধ আলু খেতে পারেন। এটি কম ক্যালোরি গ্রহণের একটি ভালো উপায়।
৯. পানি পান:
  • আলু খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এতে হজম ভালো হবে এবং ক্ষুধা কম লাগবে।
১০. ব্যায়াম:
  • শুধু ডায়েট পরিবর্তন করলেই চলবে না, প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে ক্যালোরি বার্ন হবে এবং ওজন দ্রুত কমবে।

আরো পড়ুনঃ মেদ কমানোর সহজ উপায়

সতর্কতা:

  • যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য আলু খাওয়ার পরিমাণ এবং ধরণ সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে আলু খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে, তাই সঠিক পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে আলু খাওয়ার চেষ্টা করুন।

আশা করি এই পরামর্শগুলি আপনাকে আলু খেয়ে স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

আলু খেলে কি ডাইয়াবেটিস হয় ?

আলু খাওয়া এবং ডায়াবেটিস হওয়ার মধ্যে সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। তবে আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস মুলত প্যানক্রিয়াসের ইনসুলিন উৎপাদনের কমতি বা ইনসুলিনের প্রতিরোধের কারণে ঘটে। সুতরাং, আলু খাওয়ার কারণে সরাসরি ডায়াবেটিস হয় না, তবে এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।

আলু এবং ডায়াবেটিসের সম্পর্ক:

  1. গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI):

    • আলু সাধারণত উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI)যুক্ত খাদ্য, যার মানে এটি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। উচ্চ GIযুক্ত খাবার খেলে ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ইনসুলিন প্রতিরোধের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
  2. পরিমাণ ও প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতি:

    • আলু খাওয়ার পরিমাণ এবং এটি কীভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। ভাজা আলু, যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা চিপস, রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে এবং এতে অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং ফ্যাট যোগ হয়। অন্যদিকে, সিদ্ধ বা বেক করা আলু তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর।
  3. ফাইবারের ভূমিকা:

    • আলু খাওয়ার সময় যদি ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি বা স্যালাডের সঙ্গে খাওয়া হয়, তবে এটি রক্তের শর্করা দ্রুত বাড়তে বাধা দেয়। ফাইবার রক্তে শর্করা শোষণের হার কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  4. সুষম খাদ্যাভ্যাস:

    • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র আলুর ওপর নির্ভর না করে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, এবং কম GIযুক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া উচিত।

উপসংহার:

আলু খাওয়া থেকে ডায়াবেটিস হওয়ার সরাসরি কোনও প্রমাণ নেই। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এবং প্রক্রিয়াজাত আলু খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা হতে পারে, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আলু পরিমিত পরিমাণে এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে খাওয়া ভালো। যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তবে আলু খাওয়ার আগে একজন ডায়েটিশিয়ান বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আলু দিয়ে রুপচর্চা

আলু শুধু রান্নার উপাদান নয়, এটি রূপচর্চার জন্যও ব্যবহার করা যায়। আলুতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান যেমন ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ত্বকের যত্নে সহায়ক। নিচে আলু দিয়ে কিছু রূপচর্চার পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

১. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে:

  • আলুতে প্রাকৃতিক ব্লিচিং গুণাগুণ রয়েছে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • পদ্ধতি: একটি আলু খোসা ছাড়িয়ে কুচি করে নিন। তারপর এটি থেকে রস বের করে তুলো দিয়ে মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সহায়ক।

২. অ্যাকনের দাগ ও কালো দাগ দূর করতে:

  • আলুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা অ্যাকনের জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়ক।
  • পদ্ধতি: একটি ছোট আলু খোসা ছাড়িয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে অ্যাকনের দাগ হালকা হতে পারে।

৩. ডার্ক সার্কেল দূর করতে:

  • আলুর রস ডার্ক সার্কেল কমাতে সহায়ক।
  • পদ্ধতি: আলুর রস তুলো দিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চোখের নিচের কালো দাগ কমাতে সাহায্য করবে।

৪. ত্বকের ট্যান দূর করতে:

  • আলুর প্রাকৃতিক ব্লিচিং গুণ ট্যান দূর করতে কার্যকরী।
  • পদ্ধতি: আলুর রস ও লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে ট্যানযুক্ত স্থানে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

৫. ব্রণ দূর করতে:

  • আলুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ব্রণ দূর করতে সহায়ক।
  • পদ্ধতি: আলু পাতলা করে কেটে ব্রণের উপর রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৬. ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে:
  • আলুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের বলিরেখা ও ফাইন লাইন কমাতে সহায়ক।
  • পদ্ধতি: আলুর রসের সাথে গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
৭. ত্বকের মসৃণতা বজায় রাখতে:
  • আলু ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখতে সহায়ক।
  • পদ্ধতি: একটি আলু খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে কেটে সেটি দিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন। ১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে মসৃণ করে তুলতে সাহায্য করবে।
৮. সানবার্ন কমাতে:
  • আলুতে শীতলীকরণ গুণাগুণ রয়েছে, যা সানবার্ন বা রোদে পোড়া ত্বককে শান্ত করতে সহায়ক।
  • পদ্ধতি: আলুর পেস্ট তৈরি করে সানবার্নের ওপর লাগান এবং ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

উপসংহার:

আলু প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। তবে, কোনো সমস্যা দেখা দিলে ব্যবহার বন্ধ করে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ত্বকে যেকোনো কিছু ব্যবহার করার আগে একটি ছোট অংশে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো, যাতে কোনো অ্যালার্জি বা প্রতিক্রিয়া না হয়।

আলুর ১০টি তরকারি রেসেপি

আলুর ১০টি সুস্বাদু তরকারির রেসিপি নিচে দেয়া হলোঃ

১. আলুর ভর্তা

উপকরণ:

  • ৩-৪ টা বড় আলু
  • ২ টেবিল চামচ সরিষার তেল
  • ২-৩ টা কাঁচা মরিচ (কুচি করা)
  • ১ টা পেঁয়াজ (মিহি কুচি করা)
  • লবণ স্বাদমতো
  • ধনেপাতা কুচি (সাজানোর জন্য)

প্রণালী:

  1. আলু সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন।
  2. সেদ্ধ আলু ভালোভাবে চটকে নিন।
  3. একটি প্যানে সরিষার তেল গরম করে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ সোনালি রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  4. এরপর চটকানো আলু, লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  5. তেল মিশে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন এবং ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

২. আলুর দম

উপকরণ:

  • ৫০০ গ্রাম ছোট আলু
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১ টি তেজপাতা
  • ১ টা বড় পেঁয়াজ (কুচি করা)
  • ১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
  • ১ টেবিল চামচ টমেটো পিউরি
  • ১ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
  • ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
  • ১ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়ো
  • ১/২ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো
  • লবণ স্বাদমতো
  • ১/২ কাপ দই
  • ধনেপাতা কুচি (সাজানোর জন্য)

প্রণালী:

  1. ছোট আলু সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন।
  2. একটি প্যানে তেল গরম করে তেজপাতা দিন। এরপর পেঁয়াজ দিয়ে সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  3. আদা-রসুন বাটা দিন এবং ভালোভাবে নাড়ুন।
  4. এরপর টমেটো পিউরি, সব মসলা এবং লবণ দিয়ে কষান।
  5. দই দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন।
  6. সেদ্ধ আলু গুলো মিশিয়ে দিন এবং ১০-১৫ মিনিট ঢেকে রান্না করুন।
  7. ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

৩. আলু পুঁইশাক

উপকরণ:

  • ৫০০ গ্রাম পুঁইশাক
  • ২-৩ টা বড় আলু (টুকরা করা)
  • ১ টা পেঁয়াজ (কুচি করা)
  • ২-৩ টা কাঁচা মরিচ (আলতো চেরা)
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১ চা চামচ সরিষার বাটা
  • লবণ স্বাদমতো

প্রণালী:

  1. পুঁইশাক ভালোভাবে ধুয়ে কেটে নিন।
  2. প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে নাড়ুন।
  3. সরিষার বাটা এবং আলু দিয়ে নাড়ুন।
  4. পুঁইশাক যোগ করে নেড়ে চুলা ঢেকে রান্না করুন।
  5. লবণ দিন এবং আলু ও পুঁইশাক নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
  6. নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

৪. আলুর চচ্চড়ি

উপকরণ:

  • ৩-৪ টা বড় আলু (পাতলা পাতলা করে কাটা)
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১ টা বড় পেঁয়াজ (কুচি করা)
  • ১ চা চামচ সরিষার বাটা
  • ২-৩ টা কাঁচা মরিচ (চেরা)
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
  • লবণ স্বাদমতো

প্রণালী:

  1. প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ দিন এবং হালকা সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  2. সরিষার বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লবণ এবং আলু দিয়ে নাড়ুন।
  3. ঢেকে মাঝারি আঁচে রান্না করুন যতক্ষণ না আলু নরম হয়ে যায়।
  4. গরম গরম পরিবেশন করুন।

৫. আলুর কোরমা

উপকরণ:

  • ৫০০ গ্রাম আলু (খোসা ছাড়ানো)
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১ কাপ পেঁয়াজ বাটা
  • ১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
  • ১/২ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
  • ১ চা চামচ গরম মসলা গুঁড়ো
  • ১/২ কাপ টমেটো পিউরি
  • ১/২ কাপ দই
  • ১/২ কাপ ক্রিম
  • লবণ স্বাদমতো

প্রণালী:

  1. প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ বাটা দিন এবং সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  2. আদা-রসুন বাটা, জিরা গুঁড়ো, গরম মসলা গুঁড়ো এবং লবণ দিয়ে কষান।
  3. টমেটো পিউরি ও দই দিয়ে নাড়ুন এবং কিছুক্ষণ রান্না করুন।
  4. আলু ও ক্রিম দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ঢেকে রান্না করুন।
  5. নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

৬. আলুর চাটনি

উপকরণ:

  • ৩-৪ টা বড় আলু (সেদ্ধ)
  • ১ টেবিল চামচ তেল
  • ১ চা চামচ পঞ্চফোড়ন
  • ১ টা পেঁয়াজ (কুচি করা)
  • ২-৩ টা কাঁচা মরিচ (কুচি করা)
  • লবণ স্বাদমতো
  • ধনেপাতা কুচি (সাজানোর জন্য)

প্রণালী:

  1. সেদ্ধ আলু চটকে নিন।
  2. প্যানে তেল গরম করে পঞ্চফোড়ন দিন এবং পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজুন।
  3. চটকানো আলু, লবণ দিয়ে মিশিয়ে নিন।
  4. ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

৭. আলুর কালো ভুনা

উপকরণ:

  • ৫০০ গ্রাম আলু (খোসা ছাড়ানো)
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১ টা বড় পেঁয়াজ (কুচি করা)
  • ১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
  • ১ চা চামচ জিরা গুঁড়ো
  • ১/২ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়ো
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
  • ১/২ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো
  • লবণ স্বাদমতো
  • ১/২ কাপ টমেটো পিউরি

প্রণালী:

  1. প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ দিন এবং সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  2. আদা-রসুন বাটা, সব মসলা এবং টমেটো পিউরি দিয়ে কষান।
  3. আলু মিশিয়ে দিন এবং ঢেকে ১৫-২০ মিনিট রান্না করুন।
  4. গরম গরম পরিবেশন করুন।

৮. আলু মটরশুটি ভাজি

উপকরণ:

  • ৩-৪ টা বড় আলু (খোসা ছাড়ানো এবং টুকরা করা)
  • ১ কাপ মটরশুটি
  • ২ টেবিল চামচ তেল
  • ১ টা পেঁয়াজ (কুচি করা)
  • ২-৩ টা কাঁচা মরিচ (কুচি করা)
  • ১ চা চামচ জিরা
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
  • লবণ স্বাদমতো

প্রণালী:

  1. প্যানে তেল গরম করে জিরা দিন।
  2. পেঁয়াজ এবং কাঁচা মরিচ দিন এবং সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  3. আলু, মটরশুটি, হলুদ গুঁড়ো এবং লবণ দিয়ে নাড়ুন।
  4. ঢেকে ১০-১৫ মিনিট রান্না করুন

আরো পড়ুনঃ কাঁঠাল এর বিভিন্ন তরকারি রেসিপি

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url