লাইলাতুল শবে কদরের গুরুত্বপূর্ন আমল ওফজিলত

লাইলাতুল শবে কদর (আরবি: لیلة القدر‎‎), ইসলামিক পরিভাষায় কদরের রাত বা মহিমান্বিত রাত্রি। এই রাতকে কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় একটি রাত হিসেবে, যখন আল্লাহ তাঁর রহমত, বরকত ও ক্ষমা বর্ষণ করেন। 


কোরআনে বলা হয়েছে, এই রাত হাজার মাসের থেকেও উত্তম। অর্থাৎ, এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াবের অধিকারী।

সূচিপত্রঃ লাইলাতুল শবে কদরের গুরুত্বপূর্ন আমল ওফজিলত 

লাইলাতুল শবে কদর এর উৎস

লাইলাতুল শবে কদরের উৎস মূলত ইসলামের পবিত্র কিতাব কোরআন এবং হাদিসে পাওয়া যায়। এই রাতের ইতিহাস এবং মাহাত্ম্য কোরআনুল করিমের সূরা আল-কদর ও অন্যান্য বিভিন্ন হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

কোরআনে লাইলাতুল কদরের উৎস

লাইলাতুল কদরের কথা সরাসরি কোরআনের সূরা আল-কদরে উল্লেখিত হয়েছে। এই সূরায় বলা হয়েছে, এই মহিমান্বিত রাতেই আল্লাহ তাআলা কোরআন নাজিলের প্রক্রিয়া শুরু করেন। পুরো সূরাটি লাইলাতুল কদরের মর্যাদা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে এই রাত হাজার মাসের থেকেও উত্তম। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, এই এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াবের অধিকারী।

সূরা আল-কদর (৯৭:১-৫):

"নিশ্চয়ই আমি এটি অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ওই রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ (জিবরাইল) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশ নিয়ে অবতরণ করেন। শান্তি থাকে সেই রাত ফজর পর্যন্ত।"

হাদিসে লাইলাতুল কদরের উৎস

হাদিসেও লাইলাতুল কদরের রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী অনুযায়ী, তিনি এই রাতকে খুঁজে পাওয়ার জন্য রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং সাহাবাদেরও এই রাতের ইবাদতে মনোযোগী হওয়ার জন্য উৎসাহ দিতেন।

হাদিসের বর্ণনা: হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করিম (সা.) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি ঈমান এবং সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে।" (সহিহ বুখারি)

অন্য আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে যে, নবী করিম (সা.) বলেন, "তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে খুঁজে নাও।" (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

লাইলাতুল কদরের তাৎপর্য

লাইলাতুল কদরকে আল্লাহর তরফ থেকে মুমিনদের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত হিসেবে গণ্য করা হয়। এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জন করতে সক্ষম, যা আল্লাহর অসীম রহমত ও করুণার প্রতিফলন। এটি একটি শান্তিময় ও বরকতময় রাত, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং তাদের জন্য জান্নাতের দোয়া কবুল করেন।

উপসংহার

লাইলাতুল কদর কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত একটি পবিত্র রাত, যার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের অনন্য সুযোগ পান। এই রাতের উৎস কোরআনে এবং হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, যা ইসলামের ইতিহাসে ও মুসলমানদের ইবাদতে গভীর গুরুত্ব বহন করে।

লাইলাতুল শবে কদর এর আমলগুলো

লাইলাতুল শবে কদর বা কদরের রাতে বিশেষ কিছু ইবাদত ও আমল করা হয়, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। এই রাতকে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম বলে বর্ণনা করা হয়েছে, তাই মুমিনরা এই রাতে বিভিন্ন ইবাদতে মশগুল হয়ে থাকেন।

লাইলাতুল কদরের আমলগুলো

১. নামাজ আদায়: লাইলাতুল কদরে নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। দুই রাকাত করে ছোট ছোট সালাম দিয়ে বেশি বেশি নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেকে নিবেদন করা হয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়।

২. কোরআন তিলাওয়াত: এই রাত কোরআন অবতরণের রাত, তাই কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এই রাতে যত বেশি সম্ভব কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত এবং আল্লাহর বাণী থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।

  1. তাসবিহ ও ইস্তেগফার: এই রাতে আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফ চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। "আস্তাগফিরুল্লাহ" (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই) ও অন্যান্য তাসবিহ বারবার পাঠ করা উচিত। আল্লাহর কাছে দোয়া করে নিজের অতীতের সকল গুনাহ থেকে মুক্তি কামনা করা যেতে পারে।

  2. দোয়া: কদরের রাতে মুমিনরা আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য, পরিবারের জন্য এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেন। হযরত আয়েশা (রা.)-এর বর্ণিত দোয়া এই রাতে বেশি বেশি পড়া সুন্নত:

    "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাআফু আন্নি"
    অর্থ: "হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।" (তিরমিজি)

  3. দরুদ শরিফ পাঠ: দরুদ শরিফ পাঠ করা একটি বরকতময় আমল। মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায় এবং তাঁর সুপারিশের আশা করা হয়। এই রাতে যত বেশি দরুদ পাঠ করা যায়, ততই ফজিলত বৃদ্ধি পায়।

  4. সদকা ও দান খয়রাত: এই রাতে গরিব-দুঃখীদের মাঝে দান-খয়রাত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। সদকা করার মাধ্যমে নিজের ইবাদতের সওয়াব বৃদ্ধি করা যায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

  5. তাহাজ্জুদ নামাজ: রমজানের শেষ দশকে এবং বিশেষত কদরের রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এই নামাজ গভীর রাতে আদায় করা হয় এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।

উপসংহার

লাইলাতুল শবে কদরে আমলগুলো আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন, গুনাহ মাফ এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। আল্লাহ এই রাতে বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত ও বরকত বর্ষণ করেন, যা প্রতিটি মুমিনের জন্য এক অনন্য সুযোগ।

লাইলাতুল শবে কদর এর ফজিলত

লাইলাতুল কদর হলো ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়, যা আল্লাহর কৃপায় অনির্ধারিত নির্দিষ্ট রাতে ঘটে। কুরআন এবং হাদিসের বিভিন্ন উৎস থেকে লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। এর কিছু বিশেষ ফজিলত হলো:

  1. হাজার মাসের ইবাদতের সমান: কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, "লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম" (সূরা কদর, আয়াত ৩)। এর অর্থ, এ রাতে ইবাদত করলে সেই ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে বেশি সাওয়াব অর্জন করে।

  2. কুরআন অবতীর্ণ হওয়া: এই রাতে কুরআন মজিদ প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়। এই রাতকে কুরআন নাযিলের বরকতময় রাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

  3. ফেরেশতাদের অবতরণ: এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও শান্তির বার্তা নিয়ে আসেন। তারা মুমিনদের জন্য দোয়া করেন এবং আল্লাহর রহমত বিতরণ করেন।

  4. গুনাহ মাফের সুযোগ: এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা’আলা গুনাহ মাফ করে দেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কদরের রাতে ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে" (সহীহ বুখারী)।

  5. শান্তির রাত: এই রাত আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও বরকতে পূর্ণ থাকে, যা সুবহে সাদিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

মোটকথা, লাইলাতুল কদর মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত বরকতময় এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং পাপমোচনের সুযোগ এনে দেয়।

লাইলাতুল শবে কদর কেন হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম ?

লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম, কারণ এই রাতটি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ রহমত, বরকত এবং ক্ষমার সুযোগ নিয়ে আসে, যা অন্য কোনো রাত বা সময়ে এভাবে পাওয়া যায় না। কুরআনের সূরা আল-কদরে আল্লাহ বলেছেন, "লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম" (সূরা কদর, আয়াত ৩)। এর অর্থ হলো, এই রাতে ইবাদত করা মানে ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া।

এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম হওয়ার কয়েকটি কারণ হলো:

  1. আল্লাহর কৃপা ও রহমত: লাইলাতুল কদরের রাতটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য একটি বিশেষ পুরস্কার। এই রাতটি এমন একটি সুযোগ দেয়, যার মাধ্যমে একটি রাতের ইবাদতে দীর্ঘ জীবনের ইবাদতের সওয়াব লাভ করা যায়। এটি আল্লাহর অশেষ রহমতের নিদর্শন।

  2. গুনাহ মাফের সুযোগ: এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন। যারা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাদের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এটি আল্লাহর কৃপায় বান্দার আত্মিক পরিশুদ্ধির একটি বিশেষ সুযোগ।

  3. ফেরেশতাদের অবতরণ: এই রাতে অসংখ্য ফেরেশতা, যার মধ্যে প্রধান ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) আছেন, পৃথিবীতে অবতরণ করেন। তারা মুমিনদের জন্য শান্তি ও বরকত নিয়ে আসেন এবং তাদের জন্য দোয়া করেন। এটি এই রাতের বিশেষ মর্যাদার প্রমাণ।

  4. শান্তি ও নিরাপত্তার রাত: সূরা কদরে বলা হয়েছে, এই রাতটি “শান্তির রাত”, যা সুবহে সাদিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এই রাতটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য বিশেষ শান্তি, সুরক্ষা ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে আসে।

  5. কুরআন অবতীর্ণ হওয়া: লাইলাতুল কদর সেই রাত, যেদিন মহান আল্লাহ কুরআন অবতীর্ণ করেন। এই রাতের মাহাত্ম্য কুরআনের মাধ্যমে চিরস্থায়ী হয়ে আছে, যা মানবজাতির জন্য আল্লাহর গাইডেন্স ও হেদায়েতের উৎস।

এই সবগুলো কারণে লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম, আর এটি আল্লাহর বিশেষ রহমত ও কৃপার প্রতীক। মুসলিমরা এ রাতে ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভে উৎসাহী হয় এবং তাদের গুনাহ মাফের আশা রাখে।

লাইলাতুল শবে কদর এর রাতে শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম

লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ পড়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা বা বিশেষ নিয়ম নেই। তবে এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া এবং ইবাদত করা গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদত করতে পারেন তা নিম্নে দেওয়া হলো:

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

  1. নফল নামাজ: সাধারণত ২ রাকাত করে যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়। এতে বেশি সওয়াবের আশায় অনেকেই ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ বা ২০ রাকাত পড়েন। যেকোনো সংখ্যায় ইবাদত করা যায়।

  2. প্রথম রাকাত: সুরা ফাতিহার পর যেকোনো একটি ছোট সুরা পড়তে পারেন, যেমন সুরা ইখলাস, সুরা কাওসার, ইত্যাদি।

  3. দ্বিতীয় রাকাত: সুরা ফাতিহার পর আরেকটি ছোট সুরা পড়তে পারেন। যেকোনো সুরা নির্বাচিত করা যায়।

অন্যান্য আমল ও দোয়া

  • তাহাজ্জুদ নামাজ: এই রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ মনে করা হয়।

  • তওবা ও ইস্তিগফার: এই রাত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী (সা.) এই দোয়া পড়তে বলেছেন:

    "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি"
    এর অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করো।”

  • কুরআন তিলাওয়াত: লাইলাতুল কদরে কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।

  • দোয়া ও যিকর: আল্লাহর প্রশংসা, তাসবিহ, তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ বলা), তাকবির (আল্লাহু আকবর বলা) ও অন্যান্য যিকর করা।

বিশেষ নফল নামাজের দোয়া

কিছু আলেমরা বলেন, ১০০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয় এবং প্রত্যেকের ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুযায়ী ইবাদত করা উত্তম।

লাইলাতুল কদরের ইবাদতে আল্লাহর কৃপা লাভের জন্য অন্তরের উপস্থিতি ও খুশু-খুজু (আত্মিক মনোযোগ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লাইলাতুল শবে কদর এর রাতে যে আমলগুলো পালন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ

লাইলাতুল কদরের রাতে কিছু বিশেষ আমল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম বলে আল্লাহ তা'আলা উল্লেখ করেছেন। এই রাতের ইবাদত ও আমলগুলোতে আল্লাহর অপার রহমত ও বরকত রয়েছে, যা পাপমোচনের সুযোগ দেয়। নিচে লাইলাতুল কদরের রাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল তুলে ধরা হলো:

১. নফল নামাজ আদায়

লাইলাতুল কদরের রাতে নফল নামাজ আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য দুই রাকাত করে যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়। অনেকেই ১০, ১২, বা ২০ রাকাত নামাজ আদায় করেন, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।

২. তাহাজ্জুদ নামাজ

লাইলাতুল কদরের রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া একটি বিশেষ আমল, যা মহানবী (সা.) নিজে পালন করেছেন। এটি আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ ক্ষমা ও দয়া প্রার্থনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ।

৩. তওবা ও ইস্তিগফার

এই রাতে আন্তরিকভাবে তওবা করা ও ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা উচিত। এই রাতে আল্লাহ বান্দার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন, যারা আন্তরিকভাবে ক্ষমা চান। মহানবী (সা.) এই দোয়া পড়তে বলেছেন:

"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি"
এর অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করো।”

৪. কুরআন তিলাওয়াত

এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। লাইলাতুল কদরের সাথে কুরআন অবতীর্ণের সম্পর্ক আছে, তাই কুরআন তিলাওয়াত করলে অধিক সওয়াব অর্জিত হয়।

৫. দোয়া করা

এই রাতে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। দোয়া আল্লাহর সাথে যোগাযোগের মাধ্যম, তাই জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, চাওয়া-পাওয়া এবং আখিরাতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে মঙ্গল ও কল্যাণ প্রার্থনা করা যায়।

৬. যিকর ও তাসবিহ

এই রাতে আল্লাহর নামের তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির ও তাহলিল বলা উচিত। যেমন:

  • সুবহানাল্লাহ (আল্লাহ পবিত্র)
  • আলহামদুলিল্লাহ (সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য)
  • আল্লাহু আকবর (আল্লাহ মহান)
  • লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই)

৭. সদকা ও দান-খয়রাত করা

এই রাতে দান-খয়রাত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যারা দান করেন, তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন এবং তাদের সওয়াবও বৃদ্ধি পায়।

৮. নিজের ও পরিবারের জন্য দোয়া করা

নিজের জন্য যেমন ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করবেন, তেমনি পরিবারের জন্যও দোয়া করবেন। লাইলাতুল কদরের রাতে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন, তাই এই সুযোগে পরিবারের সকলের জন্য শান্তি, সুখ ও কল্যাণ প্রার্থনা করুন।

লাইলাতুল কদরের রাতটি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। তাই এই রাতটি যথাযথ ইবাদত ও আমলের মাধ্যমে কাটানো উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url