শীত কালীন জনপ্রিয় পিঠা

পিঠা হলো বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি বা নোনতা খাবার, যা সাধারণত চালের গুঁড়ো, গুড়, নারকেল, দুধ এবং বিভিন্ন ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। পিঠা বাংলার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বিশেষ করে শীতের মৌসুমে এটি ঘরে ঘরে তৈরি হয়। 


সূচিপত্রঃ শীতকালীন জনপ্রিয় পিঠা

কোন মৌসমে পিঠা বেশি বানানো হয় ?

পিঠা সাধারণত শীতের মৌসুমে বেশি বানানো হয়। শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় পিঠা খাওয়ার একটি আলাদা আনন্দ রয়েছে, যা বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

শীতকালে পিঠা বানানোর কয়েকটি প্রধান কারণ:

  1. গুড়ের সহজলভ্যতা: শীতের সময় খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করা হয়, যা পিঠার একটি প্রধান উপাদান।
  2. উৎসবমুখর পরিবেশ: শীত মানেই নবান্ন উৎসব এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের সময়, যেখানে পিঠা একটি বিশেষ খাবার হিসেবে জায়গা পায়।
  3. পরিবারের মিলনমেলা: শীতের সময় গ্রামে-গঞ্জে সবাই একসঙ্গে বসে পিঠা তৈরি করে। এটি পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধনকে মজবুত করে।

তবে এখন সারা বছরই কিছু জনপ্রিয় পিঠা শহুরে এলাকায় মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রামীণ পরিবেশে শীতকালের পিঠার স্বাদ সত্যিই অনন্য!

শীতকালীন পিঠাসমূহ

শীতকালে তৈরি করা হয় এমন অনেক ধরনের পিঠা, যেগুলোর স্বাদ, গন্ধ এবং ঐতিহ্য বিশেষভাবে শীতের সঙ্গে জড়িত। নিচে জনপ্রিয় শীতকালীন পিঠার তালিকা দেওয়া হলো:

মিষ্টি পিঠা:

  1. ভাপা পিঠা

    • চালের গুঁড়ো, গুড় এবং নারকেল দিয়ে ভাপিয়ে তৈরি।
    • শীতের সকালের অন্যতম জনপ্রিয় পিঠা।
  2. পাটিসাপটা

    • ময়দা দিয়ে পাতলা রুটি বানিয়ে তার ভেতরে গুড় ও নারকেলের পুর ভরা হয়।
    • এটি মিষ্টি আর নরম পিঠা।
  3. চিতই পিঠা

    • চিতই পিঠা বানানো হয় ভেজানো চালের গুঁড়ো দিয়ে।
    • এটি দুধ, চিনি বা গুড় দিয়ে খাওয়া হয়।
  4. দুধ পিঠা

    • চিতই পিঠা দুধ, চিনি বা গুড়ের সঙ্গে রান্না করা হয়।
    • শীতে এই পিঠার স্বাদ অতুলনীয়।
  5. নকশি পিঠা

    • নকশা করা এই পিঠা দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমনি মজাদার।
    • সাধারণত গুড় বা নারকেলের পুর দেওয়া হয়।
  6. ক্ষীর পুলি

    • চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি পুলির ভেতরে নারকেল-গুড়ের পুর ভরে দুধে রান্না করা হয়।

নোনতা পিঠা:

  1. তেলের পিঠা

    • ডুবো তেলে ভাজা পিঠা, সাধারণত নোনতা অথবা হালকা মিষ্টি হয়।
  2. চিকুই পিঠা

    • এটি চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি নোনতা ধরনের পিঠা।

উৎসবকেন্দ্রিক পিঠা:

  1. নবান্ন পিঠা

    • নবান্ন উৎসবে বিশেষভাবে তৈরি মিষ্টি পিঠা।
    • সাধারণত নতুন চাল দিয়ে বানানো হয়।
  2. পুলিপিঠা

    • পুলির মধ্যে গুড় বা নারকেল ভরে ভাপিয়ে বা ভেজে তৈরি করা হয়।

শীতকালের পিঠাগুলো খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি হলে স্বাদ দ্বিগুণ হয়। পিঠা বানানো ও পরিবেশনের মাধ্যমে বাঙালির ঐতিহ্য এবং শীতের আনন্দ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। 

শীতকালীন প্রধান পিঠা কী ?

শীতকালীন প্রধান পিঠা বলতে সাধারণত ভাপা পিঠা এবং চিতই পিঠাকে বোঝানো হয়। এগুলো শীতের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং প্রায় প্রতিটি ঘরে তৈরি করা হয়।

ভাপা পিঠা: 

  • এটি শীতের পিঠার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত।
  • উপকরণ: চালের গুঁড়ো, গুড়, এবং নারকেল।
  • তৈরি প্রক্রিয়া: চালের গুঁড়োর মধ্যে গুড় এবং নারকেলের পুর দিয়ে মাটির ভাপে রান্না করা হয়।
  • বিশেষত্ব: খেজুরের গুড় ব্যবহার করলে এর স্বাদ আরো বেশি মনোমুগ্ধকর হয়।

চিতই পিঠা:

  • চিতই পিঠা সাধারণত মাটির বিশেষ পাত্রে (চিতই পাটি) বানানো হয়।
  • এটি সাধারণত নোনতা কিংবা গুড় বা দুধের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
  • দুধ চিতই, গুড় চিতই এগুলোর স্বাদ অতুলনীয়।

এছাড়া, পাটিসাপটা, ক্ষীর পুলি, এবং নকশি পিঠাও শীতকালে ব্যাপকভাবে তৈরি করা হয়। তবে, ভাপা এবং চিতই পিঠাই শীতকালীন ঐতিহ্যের প্রধান প্রতীক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url